বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এটা ভালো কথা। তার মানে হলো, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার মানে অন্যরা কাজ করছে না। তবে দেশের সবখানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া ঠিক হয়নি।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সেসব এলাকাতেই সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া দরকার। কিন্তু যেসব এলাকা শান্তিপূর্ণ আছে, যেখানে রাজনৈতিক নেতাকর্মীরাই বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করছেন; সেখানে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে নতুন সমস্যা তৈরি করা সমীচীন হবে না, বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব, তারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। কখনই এমন কোনো ব্যবস্থা নেবেন না যা সামগ্রিকভাবে তাদের জন্য বুমেরাং হবে, দেশের মানুষের জন্য বুমেরাং হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমরা আশা করি সঠিকভাবে বিষয়গুলো উপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত নিবেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের সঙ্গে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ৪ জনের পরিবার এবং আহত ৪৩ জনের হাতে অর্থিক সহায়তা তুলে দেওয়া হয়।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা ১৬-১৭ বছর ধরে ত্যাগ স্বীকার করছি, মার খাচ্ছি, জেলে যাচ্ছি, জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছি, শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারকে হটিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আমরা আশাবাদী অন্তর্বর্তী সরকার সব জঞ্জাল দূর করে দেশে এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যেখানে সুষ্ঠু উপায়ে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে জনগণের পার্লামেন্ট তৈরি হবে। এই অন্তর্র্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাতে চাই, আমরা যেন সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দেখতে পাই। গণতান্ত্রিক মানে নির্বাচিত সরকার দেখতে পাই, পার্লামেন্ট দেখতে পাই। আমি জানি আমার কথাগুলো অনেকের মনঃপূত নাও হতে পারে। কিন্তু সত্য উচ্চারণ করা আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকেই আমি এই কথাগুলো উচ্চারণ করছি। রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক কাজ করতে দেওয়া, এটাই সমস্যার একমাত্র সমাধান বলে আমি মনে করি।

মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশে সবার সমর্থনে একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে। তারা চেষ্টা করছেন অল্প সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের অপরাধগুলোর বিচার করতে। এই অপরাধের মূল হোতা শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই হাজার হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কয়েক দিনে তো গেছেই, তারও আগে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই অত্যাচার। বিএনপির সাতশর বেশি মানুষকে গুম করে আয়নাঘরে নিয়ে গেছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমার নিজের বিরুদ্ধে ১১১টি মামলা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ, কৃষক, যারা কোনোদিন আদালতের প্রাঙ্গণ পর্যন্ত দেখেননি; তাদের নিয়মিত আদালতে যেতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। গত ১০-১২ বছরে আদালতে যেতে যেতে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। কত ব্যবসায়ী তার ব্যবসা হারিয়েছেন, চাকরিজীবীরা চাকরি হারিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমীন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলামসহ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, যুগ্ম সম্পাদক পয়গাম আলী, দপ্তর সম্পাদক মামুনুর র?শিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর বিএনপি মহাসচিব ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় আয়োজিত দুটি সমাবেশে যোগ দেন।